নিদারুণ দীর্ঘ এক সংগ্রাম। সেই সংগ্রাম নিজের শরীরের সঙ্গে, মনের সঙ্গে, পরিবার আর সমাজ—সবার সঙ্গে। বলছি ভারতের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার মডেল ও অভিনেত্রী নিক্কি চাওলার কথা। টেলিফোনের এক পাশে নিবিড় সাক্ষাৎকারে নিকি চাওলা মেলে ধরলেন তাঁর জীবনের নানা অধ্যায় নিয়ে রচিত খাতার পাতা। অন্য পাশে সেই জীবনের গল্প শুনলেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য।

ধন্যবাদ আমাকে সময় দেওয়ার জন্য। আপনার ছেলেবেলার কথা শুনি।
পাঞ্জাবের ছোট্ট এক শহর আবোহারে আমার বেড়ে ওঠা। আবোহারকে পাঞ্জাবের ‘ক্যালিফোর্নিয়া’ ডাকা হয়। দীপাবলির দিন জন্মেছিলাম বলে অনেকে আমাকে লক্ষ্মী বলত। আমি ছেলে হয়ে জন্মেছিলাম। ছোটবেলা থেকেই মেয়েদের পোশাক, লিপস্টিক, কাজলসহ নানা সাজের জিনিস আমাকে আকৃষ্ট করত। আমি মেয়েদের মতো করে সাজতাম। মাধুরী দীক্ষিতের গানে নাচতাম। প্যান্ট, শার্ট পরতে একদম ভালো লাগত না। তখন সবাই আমার এই সব আচার, আচরণ, ব্যবহার, নাচ উপভোগ করত। কিন্তু একটা সময় পর আমার এ সবকিছু সবার কাছে অদ্ভুত লাগা শুরু হলো। আমরা তিন ভাই ছিলাম। আমি আমার কাজিনদের জামাকাপড়, মেকআপ নিতে চাইতাম। কিন্তু তখন আমি এতটাই ছোট ছিলাম যে কিছুই বুঝতে পারতাম না। আমার মন যা চাইত, আমি শুধু তা–ই করতাম।
কখন মনে হলো যে আপনি নারী?
আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি। সেই সময় থেকে অনুভব করতাম যে আমি শারীরিকভাবে পুরুষ, মানসিকভাবে নারী। আমার পরিবার, আমার সমাজ জোর করে আমাকে পুরুষ সাজাচ্ছে। মেয়েলি যা কিছু, আমাকে আকৃষ্ট করত। পরিবার ও সমাজের সঙ্গে আমি অনেক বিদ্রোহ করেছি। আমার মেয়েলি নাচ দেখে একসময় সবাই করতালি দিত। কিন্তু একটা সময় পর আমি নাচলে আমাকে মারধর করা হতো। নির্জীব হয়ে ঘরের এক কোণে পড়ে থাকতাম। আমাকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করত। স্কুলে আমার একটাও বন্ধু ছিল না। সবাই বলত যে আমি মানসিকভাবে অসুস্থ। আমার চিকিৎসার প্রয়োজন। আমি তাদের কিছুতেই বোঝাতে পারতাম না যে আমি সত্যিই নারী।

এই সংগ্রামের সময় কাউকে পাশে পাননি?
কেবল একজন আমার মানসিক অবস্থা অনুভব করতেন। তিনি আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক। উনি আমাকে সব সময় সাপোর্ট করেছেন। আমাকে নানা দায়িত্ব পালন করতে দিতেন। এ ছাড়া কেউ আমাকে বুঝতে পারেনি। এমনকি শুরুর দিকে আমার বাবা, মা, পরিবারও না।
إرسال تعليق